আচ্ছা, আমি যদি দেয়ালে নিজের সর্বোচ্চ বল দিয়ে ঘুঁষি দেই, তাহলে দেয়ালও নিশ্চয় সেই পরিমাণ বল আমার দিকে প্রয়োগ করবে? তো, দেয়াল যদি একই পরিমাণ বল বিপরীত দিক থেকে আমার উপর প্রয়োগ করতো, তাহলে তো আমার গতিশীল হয়ে যাওয়ার কথা ছিল। কারণ,বলের কারণেই তো কোনো বস্তু গতিশীল হয়। কিন্তু, বাস্তবে তো আমি গতিশীল হইনি। এর কারণ কী?


গতিশীল না হলেও দেয়ালে ঘুঁষি মারলে বল নিশ্চয় অনুভব করেছো হাতের ওপর। যত শক্ত হবে দেয়াল, তত বেশি বল অনুভব করবে।

গতিশীল হবে কিনা, সেটা নির্ণয় করতে হলে শুধু একটা বলের কথা ভাবলেই চলবে না। হ্যাঁ, দেয়াল উল্টো দিকে ধাক্কা দিচ্ছে, কিন্তু সেটাই কি একমাত্র বল তোমার ওপর? তুমি যে মেঝেতে দাঁড়িয়ে আছো, সেটা কিন্তু বিপরীত দিকে বলপ্রয়োগ করছে তোমার ওপর।

কয়েকটা উদাহরণ দেওয়া যাক।

[১] ঘুঁষি মারার পরিবর্তে তুমি দেয়ালে যদি কিছু ছুঁড়ে মারো, যেমন একটা ক্রিকেট বল, তাহলে সেটা ফেরত আসে তো? ওই ক্রিকেট বলটাকে ফেরত পাঠায় দেয়ালের প্রতিক্রিয়া। এক্ষেত্রে দেয়ালের প্রতিক্রিয়াকে বাধা দেওয়ার কেউ নেই। হাওয়ার প্রতিরোধ কিছুটা থাকলেও সেটা নগণ্য। অতএব ক্রিকেট বল সুরসুর করে ফিরে আসে।

[২] তুমি নিজে মেঝের উপর দাঁড়িয়ে দেওয়ালে ঘুসি না মেরে একটা চাকা লাগানো চেয়ারে বোসো।  আর একজনকে বলো সেই চেয়ারটাকে সর্বোচ্চ বল দিয়ে দেওয়ালের দিকে ঠেলতে যতক্ষণ না চেয়ারটা দেওয়ালে ধাক্কা মারছে। ভীতিজনক পরিস্থিতি বৈকি! ধাক্কা মারার ঠিক আগের মুহূর্তে যদি অন্যজন চেয়ার থেকে হাত তুলে নেয়, তাহলে কি দেখবে? চেয়ারের গতিবেগের দিশায় ১৮০ ডিগ্রী পরিবর্তন (recoil) হচ্ছে না কি? তার মানে আবার দেয়ালের প্রতিক্রিয়ার প্রভাব দেখতে পাচ্ছ, নইলে প্রাথমিক গতিবেগের উল্টো দিকে ত্বরণ সম্ভব হতো না।

ভেবে দেখো: এইসব ক্ষেত্রে দেয়ালের প্রতিক্রিয়া না থাকলে উল্টো দিকে বল কে দিল? 

মেঝেতে দাঁড়িয়ে থাকা অবস্থায় ঘুসি মারলেও শুধু দেয়ালের প্রতিক্রিয়ার কথা ভাবলে তোমার উল্টো দিকে ছিটকে যাওয়ার কথা। কিন্তু  শরীরের সঙ্গে মেঝের ঘর্ষণ বল শরীরের ত্বরণকে বাধা দেয়। 

যেদিকে গতিবেগের প্রবণতা, ঘর্ষণবল তার বিপরীত দিকে কাজ করে কেন? আসলে খালি চোখে যতই মসৃণ লাগুক, মেঝেটা আসলে এবড়োখেবড়ো। তোমার পায়ের কিম্বা জুতোর তলটাও তাই। মেঝের আর পায়ের পরমাণুগুলো একে অন্যকে ভ্যান ডার ওয়ালস বল দিয়ে আটকে রাখার চেষ্টা করে। অতএব তোমার যেদিকেই গতির প্রবণতা থাকুক, আসলে তুমি ওই মেঝে আর জুতো বা পায়ের মধ্যের ইলেকট্রস্ট্যাটিক আকর্ষণ বলকে অতিক্রম করে বেরোতে চাইছ। সেইটা করতে একটু বাধা পাবে বৈকি! এটাই ঘর্ষণবল এবং অনেকদূর অব্দি ওটা দেয়ালের প্রতিক্রিয়াকে ঠেকাতে পারে।  

তাই ঘর্ষণবল আর দেয়ালের প্রতিক্রিয়াতে কাটাকুটি হয়ে তোমার ওপর নিট বল শূন্য। আর বল না থাকলে গতিও নেই।

Comments

Popular posts from this blog

বিষাক্ত শুঁয়োপোকা

দারুণ সুখবর ফ্রেশারদের জন্য ! প্রচুর পদে নিয়োগ ! জেনে নিন বিস্তারিত